কুষ্টিয়ার কুমারখালির গাড়াবাড়িয়া গ্রামের আলামিন হোসেন এখন একজন সফল ফ্রিল্যান্সার গ্রাফিক ডিজাইনার। ছোটবেলা থেকেই তাকে দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে। তার বাবা মো. মনিরুল ইসলাম একজন ক্ষুদ্র লুঙ্গি ব্যবসায়ী এবং মা মোছা. তাসলিমা খাতুন একজন গৃহিনী। তিন ভাই-বোনের মধ্যে আলামিন বড়।
সংসারের অভাব-অনটনের কারণে এইচএসসি পাসের পর থেকেই জীবিকার চিন্তা তাকে পেয়ে বসে। ঠিক তখনই তিনি ওয়েভ ফাউন্ডেশন-এর মাধ্যমে সরকারের আইসিটি বিভাগের আওতায় পরিচালিত Skill for Employment Investment Program (SEIP) প্রকল্পের অধীনে ২০২০ সালে তিন মাসের আবাসিক গ্রাফিক ডিজাইন প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণের সময়েই করোনার কারণে তার বাবার ব্যবসায় ধস নামে। পরিস্থিতি সামাল দিতে আলামিন অনলাইন মার্কেটপ্লেস ফাইভার-এ কাজ শুরু করেন। প্রথমদিকে বেশ কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয় তাকে। রাত জেগে কাজ করা, বায়ারের উত্তর পাওয়ার অপেক্ষা—সবকিছুই ছিল নতুন। প্রথম আয় আসে ৭০ ডলার। ইংরেজি ভাষায় যোগাযোগে দুর্বলতা থাকলেও হাল ছাড়েননি। এক বছর পর ফাইভার-এর লেভেল-১ অর্জন করেন। এরপর মাত্র ছয় মাসের মধ্যে লেভেল-২ এবং চূড়ান্ত লেভেলে পৌঁছে মোট আয় করেন ২০০০ ডলার।
বর্তমানে আলামিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্রেশ ভাইবস ই-কমার্স ও ইনহাউজ ক্রিয়েটিভ নামে দুটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিভিত্তিক কাজ করছেন। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত তিনি অনলাইনে আয় করেছেন ১০ হাজার ডলার। তার মাসিক গড় আয় এখন ৮০-৯০ হাজার টাকা। এই আয়ে তিনি নিজ পরিবারের প্রধান উপার্জনকারী হয়ে উঠেছেন। কিনেছেন মোটরসাইকেল, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, স্মার্ট টিভি ও প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র। গ্রাম থেকে চার কিলোমিটার দূরে পান্টি বাজারে একটি ট্রেনিং সেন্টার খুলে স্থানীয় যুবকদের গ্রাফিক ডিজাইন প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। আলামিনের লক্ষ্য—নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে এলাকার আরও বেকার যুবকদের ফ্রিল্যান্সিংয়ে উদ্বুদ্ধ করা। তিনি বিশ্বাস করেন, দক্ষতা ও পরিশ্রমই সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। তিনি বলেন, “ওয়েভ ফাউন্ডেশনের সেই তিন মাসের প্রশিক্ষণ ছিল আমার জীবনের মোড় ঘোরানো সময়। তখন হয়তো শুধু গ্রাফিক ডিজাইন শিখেছিলাম, কিন্তু আসলে শিখেছিলাম—নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখতে হয়। আজ আমি যা কিছু, তার শুরু হয়েছিল সেখান থেকেই।”