বর্তমানে মাছ শুধু খাওয়ার জন্য নয় বরং ঘরে সাজিয়ে রাখতেও ব্যবহৃত হচ্ছে। বড় বড় শহরের অভিজাত বাড়ি ও বাণিজ্যিক ভবনের মতো ছোট শহরেও একুরিয়ামে মাছ রেখে লালন-পালনের চিত্র বাড়ছে। সাধারণত একুরিয়ামে যে মাছগুলো রাখা হয় সেগুলো চাষের মাছ থেকে আলাদা। এরা রঙিন, দৃষ্টিনন্দন এবং অপেক্ষাকৃত ছোট আকৃতির হয়। এদের বলা হয় বাহারি মাছ বা Ornamental Fish.
একুরিয়ামে রেখে লালন-পালন করা হয় বলে এদেরকে একুরিয়ামের মাছও (Aquarium Fish) বলা হয়ে থাকে। বন্ধুত্বসুলভ মায়াবী আচরণ ও আকর্ষণীয় দৃষ্টিনন্দন রঙের কারণে এদেরকে “জীবন্ত রত্নও (Live Jewel)” বলা হয়। বর্তমানে আমাদের দেশে অনেকের কাছে বাহারি মাছ চাষ একটি লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে।
বাহারি মাছ চাষ করতে খুব বেশি জায়গার প্রয়োজন হয় না। ট্যাংক তৈরি করে সেখানে চাষ করা যায়। এই প্রযুক্তিতে মাছ চাষ খুব সহজসাধ্য, স্বল্প সময়সাপেক্ষ এবং অতি লাভজনক। এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ বাড়ির আঙ্গিনায়ও করা- সম্ভব, তাই সবাই অতি সহজে তা চাষ করতে পারেন। বাহারি মাছের চাহিদা আমাদের দেশে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল, ময়মনসিংহ, রংপুর, যশোর, দিনাজপুর, কুষ্টিয়াসহ অন্যান্য ছোটবড় শহরে বাহারি মাছের ব্যবস্যা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।
বাণিজ্যিকভাবে বাহারি মাছ চাষ প্রযুক্তিটি সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পিকেএসএফ-এর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ ইউনিটের সহযোগিতায় ওয়েভ ফাউন্ডেশন চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলাধীন বিষ্ণুপুর গ্রামের ৫জন সদস্যকে প্রয়োজনীয় উপকরণ ও প্রযুক্তি সহায়তা প্রদান করে। এদের মধ্যে মোছা. শাহনাজ খাতুন ২০১৮ সালে বাহারি মাছ চাষ শুরু করেন। তার পুকুরে মলি, গাপ্পি, গোল্ড ফিশ, ওরেন্ডা গোল্ড ফিশ, প্লাটি, কৈ কার্প, কমেট, ব্ল্যাক মোরসহ মোট ৮ প্রজাতির বাহারি মাছের পোনা উৎপাদন হয়। বর্তমানে এসব বাহারি মাছের প্রাকৃতিক প্রজননের মাধ্যমে তিনি পোনা উৎপাদন করছেন। শাহনাজ খাতুন তার বড় ছেলেকে সাথে নিয়ে বিষ্ণুপুর বাজারে বাহারি মাছের একটি বিক্রয় কেন্দ্র গড়ে তুলেছেন।
প্রজাতি ও আকার অনুযায়ী মাছের দাম জোড়া প্রতি ২০ টাকা থেকে শুরু করে প্রায় ১,২৫০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। বর্তমানে শাহনাজ খাতুনের মাসিক আয় গড়ে ৮-১৫ হাজার টাকা। বাহারি মাছের পাশাপাশি তিনি মাছের খাবার, বিভিন্ন খাদ্য প্ল্যান্টসহ লালন-পালনের প্রয়োজনীয় উপকরণও বিক্রি করেন। তার সফলতা দেখে অনেক নারী-পুরুষ বাহারি মাছ চাষ শুরু করেছেন এবং এলাকায় দিন বদলের সুবাতাস বইছে।