গত ২১ নভেম্বর ২০২২ ঢাকার ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) মিলনায়তনে ক্রিশ্চিয়ান এইডের সহায়তায় বাস্তবায়নাধীন প্রোমোটিং সিটিজেনস্ পার্টিসিপেশন ফর প্রোগ্রেসিভ ট্যাক্সেশন প্রকল্পের ‘স্টার্ট-আপ ইভেন্ট’ অনুষ্ঠিত হয়। এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ওয়েভ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মহসিন আলী, যেখানে সম্মানীয় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের উপসচিব মো. তাজুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে ‘বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্রগতিশীল কর ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কর ন্যায্যতা’ বিষয়ক গবেষণার সার-সংক্ষেপ উপস্থাপন করেন গবেষণা সহযোগী ও ড্যাফোডিল ইনস্টিটিউট অব আইটি’র প্রভাষক সানজিদা ইসলাম। সংস্থার উপ-পরিচালক কানিজ ফাতেমার সঞ্চালনায় প্রকল্প পরিচিতি তুলে ধরেন প্রকল্পের সমন্বয়ক নির্মল দাস।
বাংলাদেশের বর্তমান কর ব্যবস্থার বেশিরভাগই পরোক্ষ করের উপর নির্ভরশীল, যা দরিদ্র ও নিন্ম আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য ন্যায্য নয়। পরোক্ষ এ কর ব্যবস্থা সমাজের সচ্ছল অংশের তুলনায় দরিদ্র মানুষের আয়ের একটি বড় অংশ নিয়ে নেয়। অন্যদিকে, ভ্যাটের কার্যকারিতা সবার ক্ষেত্রে সমান প্রভাব ফেলে বলে এটি দরিদ্রের উপর একটি বোঝা তৈরি করে এবং শেষ পর্যন্ত দরিদ্র এবং ধনীর মধ্যে আয়-বৈষম্য সৃষ্টি করে। দরিদ্র মানুষকে ধনীদের তুলনায় প্রয়োজনীয় পণ্যগুলোতে আয়ের চেয়ে বেশি ব্যয় করতে হয়। তাই প্রয়োজন জনঅংশগ্রহণমূলক একটি প্রগতিশীল কর ব্যবস্থা। অনুষ্ঠানে উপস্থিত নাগরিক সমাজের সংগঠনসহ যুব সমাজের প্রতিনিধিরা এসব কথা বলেন।
স্টার্ট-আপ ইভেন্টের সভাপতি মহসিন আলী বলেন, “সরকার নানা উদ্যোগ নিলেও দরিদ্র ও ধনীর মধ্যে বৈষম্য দিন দিন বাড়ছে। বর্তমান মূল্যস্ফীতির কারণে দরিদ্র তো বটেই, মধ্যবিত্তরাও হিমশিম খাচ্ছেন। ধনী ব্যক্তি যারা কর ফাঁকি দেন, দুর্নীতি করেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের উদ্যোগকে আরো বেগবান করতে হবে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে জনগণের পক্ষ থেকে প্রগতিশীল কর ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সচেতন দাবি উত্থাপন করতে হবে।” সম্মানীয় অতিথি মো. তাজুল ইসলাম তার বক্তব্যে বলেন, “দরিদ্র মানুষকে পরোক্ষভাবে ভ্যাট দিতে হলেও তার পরিমাণ খুব বেশি নয়। চাল ও কাঁচা সবজির উপরে ভ্যাট নেই। সরকার সবার মঙ্গলের জন্য কাজ করে যাচ্ছে বলে বছর বছর সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বৃদ্ধি করছে।”
গবেষণার ফলাফল উপস্থাপনকালে সানজিদা ইসলাম বলেন, “বর্তমানে পরোক্ষ করের পরিমাণ প্রায় ৩৬ শতাংশ। ভ্যাট ধনী-গরিবের মধ্যে সমানভাবে প্রয়োগ হয় বলে তা একটি অন্যায্য প্রক্রিয়া। আয়কর প্রদান প্রক্রিয়া এত জটিল যে সাধারণ মানুষের মধ্যেও এর সম্পর্কে এক ধরনের ভীতি বা দ্বিধা রয়েছে।” তিনি এ প্রক্রিয়াগুলোকে সহজতর করা, জনঅংশগ্রহণ বৃদ্ধি ও পরোক্ষ করের ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান।