প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও দারিদ্র্যের কারণে লেখাপড়া করা সম্ভব হয়নি নাসিমার। চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর উপজেলার এক নিম্নবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন নাসিমা খাতুন। পরিবারের অমতে বিয়ে করায় বড় ধরনের ছন্দপতন ঘটে তার জীবনে। স্বামী চাঁদ আলী একই এলাকার দরিদ্র ঘরের ছেলে। পৈত্রিকসূত্রে পাওয়া মাত্র ২ বিঘা আবাদি জমিতে কৃষিকাজ শুরু করেন চাঁদ আলী। আর নাসিমা হাঁস-মুরগি ও ছাগল পালন শুরু করেন। অনেক লড়াই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে চলতে থাকে তাদের বিবাহিত জীবন।

এভাবে তারা দুজন মিলেই জীবন-জীবিকার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করতে থাকেন। প্রতি বছর কৃষিকাজ থেকে অর্জিত আয়ের উদ্বৃত্ত কিছু টাকা থেকে কয়েক শতক করে আবাদি জমি ক্রয় করতে থাকেন। এরইমধ্যে পাশের গ্রাম কাটাপোলে কয়েকজন কৃষক আলু চাষ শুরু করেন, যা দেখে নাসিমা উদ্বুদ্ধ হন এবং সিদ্ধান্ত নেন আলু চাষ করবেন। হল্যান্ডের একটি কোম্পানি ও দেশীয় একটি বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে আলু চাষের উপর ৩ দিনের একটি প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেন নাসিমা এবং তার স্বামী। কিন্তু আলু চাষে বেশি খরচ হওয়ায় তারা পুঁজি সংকটে পড়েন। এমন সময় নাসিমা জানতে পারেন, ওয়েভ ফাউন্ডেশন এ ধরনের কাজে ঋণ এবং বিভিন্ন কারিগরি সহায়তা প্রদান করে থাকে। শুধু তাই নয়, নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করার ক্ষেত্রে সংস্থার বহুমুখী কার্যক্রমও পরিচালিত হচ্ছে। পরবর্তীতে নাসিমা সংস্থার বৃষ্টি মহিলা সমিতিতে যুক্ত হয়ে সঞ্চয় জমা করতে থাকেন এবং ২০১৭ সালের ২৫ মে অগ্রসর কম্পোনেন্ট থেকে ৭০ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। এছাড়া জমাকৃত সঞ্চয় উত্তোলন করে কিছু টাকা দিয়ে একটি গরুর বাছুর কেনেন এবং বাকি টাকা দিয়ে আলু চাষ শুরু করেন।

ঐ বছর আলু চাষে ভালো লাভ করেন নাসিমা দম্পতি। পরের বছর এপ্রিল মাসে অগ্রসর কম্পোনেন্ট থেকে আবারও ৬০ হাজার টাকা এবং অক্টোবর মাসে মৌসুমী ঋণ কম্পোনেন্ট থেকে ৪০ হাজার টাকা গ্রহণ করে ৫ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেন। প্রতি বছর তিনি তার উৎপাদিত আলু থেকে উৎকৃষ্ট মানের আলু রেখে দেন। তা দিয়ে বীজ তৈরি করেন এবং পুনরায় তা নিজের জমিতে রোপণ করেন। এছাড়া বাড়িতে পালিত ছাগলের বিষ্ঠাকে সার হিসেবে জমিতে প্রয়োগ করেন। এভাবে প্রতি বছর ধারাবাহিকভাবে তার আলুর উৎপাদন ও ছাগলের সংখ্যা বাড়তে থাকে এবং নীট আয়ের পরিমাণও বৃদ্ধি পেতে থাকে। সর্বশেষ মৌসুমে শুধু আলু চাষ থেকে ১ লক্ষ টাকার উপরে নীট লাভ করেন এবং ছাগল পালন থেকে ৩০-৪০ হাজার টাকা আয় করেন। প্রতি বছরের অর্জিত নীট লাভ থেকে বিগত ৫-৬ বছরে তিনি প্রায় ৫ বিঘা কৃষিজমি কিনেছেন। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ২০ লক্ষ টাকা।

অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ায় নাসিমা দম্পতিকে এখন আর পিছনে ফিরে তাকাতে হচ্ছে না। নাসিমা এবং চাঁদ আলী উভয়ের পরিবারই এখন তাদেরকে মেনে নিয়েছে। তারাও সুখে-দু:খে পরিবারকে বিভিন্নভাবে সহায়তা করছে। শ্বশুরবাড়ির যে কোনো সিদ্ধান্তে নাসিমা এখন অংশগ্রহণ করেন এবং তার মতামত সেখানে গুরুত্ব পায়।

নাসিমার ইচ্ছা, একদিন তিনি অনেক বড় কৃষক হবেন। পরিবারের মতো, সমাজের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে নিজেকে নিয়োজিত করবেন এবং সেখানেও বিভিন্ন পর্যায়ের সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় তার অংশগ্রহণ থাকবে।

Contact Us

We're not around right now. But you can send us an email and we'll get back to you, asap.

Not readable? Change text. captcha txt